শেষ বিকেলের মেয়ে জহির রায়হান আপনার জীবনে অনেক মেয়েই আসতে পারে যারা নিজেদের রঙে আপনার শেষ বিকেলকে তাদের মত রাঙিয়ে দেবে। কিন্তু দিনশেষে শেষ বি...

Shesh Bikeler Meye by Zahir Raihan

Shesh Bikeler Meye by Zahir Raihan

Shesh Bikeler Meye by Zahir Raihan

8 10 99



শেষ বিকেলের মেয়ে
জহির রায়হান

আপনার জীবনে অনেক মেয়েই আসতে পারে যারা নিজেদের রঙে আপনার শেষ বিকেলকে তাদের মত রাঙিয়ে দেবে। কিন্তু দিনশেষে শেষ বিকেলের মেয়ে তাকেই বলতে হয় যে দিনশেষে আপনার আশ্রয় হয়।

ষাটের দশক, পূর্ববঙ্গে কেরানি তথা মধ্যবিত্ত জীবন তখন জীবন সংগ্রামের অধুনা রূপটি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। স্বপ্ন তখন সংগ্রামের শর্ত। উপন্যাসটি ঠিক এই প্রেক্ষাপটে তরুণ কেরানি কাসেদের গল্প বলে যার কাছে স্বপ্নটা তখনো সংগ্রাম থেকে দূরে বা স্বপ্নকে সংগ্রামের গ্রাস থেকে বাঁচাতে যে তখনো নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

গল্প-বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু যদি কাসেদ হয়, তাহলে গল্পের পরিধি হচ্ছে কাসেদকে ঘিরে উঠে আসা পাঁচজন মেয়ে। এদের একজন জাহানারা, যে দেখে একদিকে যেমন একঘেয়ে যান্ত্রিকতার ভীড়ে একমাত্র কাসেদের মত মধ্যবিত্তরাই তাকে স্বপ্নে স্থান দিতে পারে; অপরদিকে তেমন মধ্যবিত্তসত্ত্বার বাইরে এসে কাসেদরা কখনোই উচ্চবিত্তের জাহানারাদের কাছে নিজেদের মেলে ধরতে পারে না। তাই দিনশেষে কারো প্রেয়সী নয়, বরং তার নিজের মত উচ্চবিত্ত কারো ঘরের পুতুল হওয়ার প্রস্তুতিই তাকে নিতে হয়।
অপরজন সালমা, কাসেদের খালাতো বোন; সালমা সেই কৈশোর থেকে কাসেদকে ভালোবেসে আসলেও কাসেদ কখনো পারেনি বাবাহারা পরিবারের বোঝা অপেক্ষা সালমার প্রেমকে বড় করে দেখতে। ফলে একসময় সালমার বিয়ে হয়ে যায় বড় চাকুরে কোন ছেলের সাথে এবং সেই সংসারের শো-পিস হয়ে থাকতে হয় সালমাকে। তবে বিয়ের পরও নিজের শো-পিস সত্ত্বার বাইরে এসে সালমা যখন কারো ভালোবাসা পাওয়ার তৃষ্ণায় কাতর হয়েছে, তখনো সে কাসেদ ছাড়া এই যান্ত্রিক সমাজে কাউকে খুঁজে পায়নি। কিন্তু কাসেদ নিজের মধ্যবিত্তসত্ত্বার সীমারেখা পার হয়ে তখনো সালমাকে তার প্রাপ্য ভালোবাসা দিতে পারেনি।
এরপর আসে কাসেদের সিনিয়র এক কলিগের মেয়ে, উপন্যাসে তার পরিচয় "কৃষ্ণবর্ণ মেয়েটি"। জাহানারার কাছে নিজের দুর্ভেদ্য প্রকাশ নিয়ে কাসেদ যখন ক্লান্ত, তখনই দৃশ্যপটে আসে মেয়েটি। কন্যাদায়গ্রস্ত কলিগের টানাটানির সংসারের এই মেয়েটি ক্লান্ত কাসেদের কল্পনা-পটে নির্মল ছায়া হয়ে হাজির হতে থাকে। কিন্তু অফিসের বড় সাহেবকে তার বিত্তশালী স্ত্রী ডিভোর্স দিলে সেও এই মেয়েটির মধ্যেই নিজের শেষ ঠিকানা খুঁজে পায়। শেষ পর্যন্ত অবধারিতভাবেই বড় সাহেবই জিতে নেয় সেই কৃষ্ণবর্ণা শীতল ছায়া-কন্যাকে। মধ্যবিত্ত মানুষিকতার বাধায় এখানেও অপ্রকাশিত থেকে যায় কাসেদ।
এরপর শিউলি, জাহানারার কাজিন। মেয়ে হিসেবে সে অন্যদের চেয়ে আলাদা, স্বাধীনচেতা, কর্তৃত্বপরায়ণ। ছেলেদের সাথে শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্কে বিশ্বাসী এই মেয়েটি এক সময় কাসেদের উপর দুর্বল হলেও নিজের কৃর্তৃত্বসুলভ সত্ত্বা বজায় রাখতে সেও প্রত্যাখ্যান করে বসে কাসেদকে। আর সেটা এমন একটা সময়ে যখন জাহানারা, সালমা আর সেই কৃষ্ণবর্ণাকে হারিয়ে কাসেদ অনেকটা অসহায়!





0 Comments: